বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে দুই পায়েই গুলি লেগেছিল তরুণ মো. বেল্লাল ইসলামের। সেই গুলি বের করা হলেও এখনো হাঁটতে পারছেন না তিনি। বাড়িতে বিছানায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। অভাবের সংসারে এখন ওষুধ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না বেল্লাল।
বেল্লালের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে কথা হয় বেল্লাল ইসলামের (২০) সঙ্গে। ২০২২ সালে এইচএসসি পাসের পর আর্থিক অনটনে স্নাতকে (বিএ) ভর্তি হওয়া হয়নি বেল্লালের। তবে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে মাস ছয়েক আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ছোটখাটো কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড়ের পাশাপাশি পরিবারের আয়ের সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রামপুরা টেলিভিশন ভবন এলাকার একটি নার্সিং হোমে চাকরি করছিলেন বেল্লাল।
বেল্লালের বাবা মো. আলাউদ্দিন গাজী পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। মা সোসা. নাজমা বেগম গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বেল্লাল ছোট।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বেল্লাল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পরিবারের কাউকে না জানিয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। ছাত্রদের ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট (সোমবার) সকালে প্রগতি সরণির মেরুলবাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর দুই পায়েই গুলি লাগে। একই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর সামনেই নরসিংদীর এক তরুণকে মারা যেতে দেখেন বিল্লাল।
এ সময় উপস্থিত কয়েকজন তাঁকে আফতাবনগরের নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সেখানে রোগীর ভিড়ে জায়গা পাননি। রাখা হয় একই এলাকার ছোট একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে। খবর পেয়ে দুই দিন পরে সেখানে ছুটে আসেন বড় বোন আখি আক্তার। এরপর তাঁর পায়ের গুলি বের করা হয় রাজধানীর বাসাবো এলাকার মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে। গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) গ্রামের বাড়ি আসেন।
কয়েক দিন আগে কাজে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে বিছানায় পড়ে আছেন বেল্লালের বাবা আলাউদ্দিন গাজী। মা নাজমা বেগমও শারীরিকভাবে অসুস্থ।
আলাউদ্দিন গাজী বলেন, একমাত্র ছেলে বেল্লালের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে চাকরি করবে, সংসারের হাল ধরবে। কয়েক মাস আগে ঢাকায় যায়। অল্প বেতনে একটি চাকরিও পেয়ে যায় বেল্লাল। কিন্তু ছেলে যে ছাত্র আন্দোলনে গেছে, তা তাঁরা জানতেন না।
আলাউদ্দিন গাজী বলেন, যেভাবে পুলিশ গুলি করে মানুষ মেরেছে, এর মধ্যেও ছেলে বেঁচে আছে, এতেই তিনি আনন্দিত। আন্দোলনে গিয়ে তাঁর ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তিনি নিজেকে একজন গর্বিত বাবা মনে করছেন।
ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বন্ধুকের গুলি ও বাঁ পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশে ছররা গুলি লাগে বলে জানিয়েছেন বেল্লাল ইসলাম। তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে এসে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে গিয়ে ড্রেসিং করাচ্ছেন ও ওষুধ খাচ্ছেন। ওষুধ কিনতেও তাঁর বাবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডান পায়ে যে গুলি লেগেছে, তা রাবার বুলেট কিংবা ছররা গুলি নয়। এ কারণে তাঁর এখন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘ভয় হয়, পঙ্গু হয়ে গেলে চলমু কেমনে? দেখবে কে?’
বেল্লালের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘অর গুলি লাগোনের কথা হুইনা যেন আসমান ভাইঙ্গা মাথায় পড়ছে। অভাবের সংসার, ওর বাপ আর আমিও অসুস্থ। বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে পোলাডায়। এ্যাহন অরে ভালো চিকিৎসা করানোর কোনো টাহা-পয়সা আমাগো হাতে নাই।’