মো. জাকির সিকদারের বাসা রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। বয়স ৩৩ বছর। গুলশানের একটি পোশাকের দোকানে চাকরি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। গত ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
আহত জাকির সিকদারকে প্রথমে আফতাব নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। জাকিরের আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারে সাহস করেননি। এরপর জাকিরকে আনা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল থেকে আবার পঙ্গু হাসপাতালে। সেই থেকে জাকির পঙ্গু হাসপাতালে
হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের একটি করে পা কেটে ফেলা হয়েছে। একজনের হাত কাটতে হয়েছে। এই ১১ জনকে বাকি জীবন প্রতিবন্ধী হয়ে কাটাতে হবে।
জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। বুলেটে হাড় ভেঙেছে, রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। মোটা বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে পা মুড়ে রাখা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় জাকির সিকদারের মা ও তাঁর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে পা কেটে ফেলা হয়। এরপর আরও তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁরা ঠিক জানেন না, কবে হাসপাতাল থেকে জাকিরকে ছাড়া হবে।
হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের একটি করে পা কেটে ফেলা হয়েছে। একজনের হাত কাটতে হয়েছে। এই ১১ জনকে বাকি জীবন প্রতিবন্ধী হয়ে কাটাতে হবে।
জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকেরা। বুলেটে হাড় ভেঙেছে, রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। মোটা বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে পা মুড়ে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক আহত ব্যক্তিকে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অনেকের পা বা হাত শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাঁরাও অনেকটা প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছেন।’
পঙ্গু হাসপাতালের পাশে রাস্তার ওপারে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এই হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩২ জন চোখে আঘাত পাওয়া রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লেগেছিল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, করছি। তার পরও দুই–তিনজনের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাঁরা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’
পায়ে, হাতে, চোখে বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে গুলি লেগে আহত অনেকেরই এখনো চিকিৎসা শেষ হয়নি। রাজধানীর সাতটি সরকারি হাসপাতালে এ রকম ৪৩৯ রোগীর চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ১৭৫ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ১৪৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৩২ জন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ১২ জন আছেন। এর বাইরে বেশ কিছু আহত ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অনেক আহত ব্যক্তিকে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অনেকের পা বা হাত শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাঁরাও অনেকটা প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছেন।
হাসপাতালের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যাঁদের পা কাটা গেছে, তাঁদের কৃত্রিম পা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম পা সংযোজনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রোগীদের ওষুধ দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার আগে নুরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। আর ফরিদা আখতার বলেন, হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার পরও কারও কারও চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। সেই প্রয়োজন মেটাতে প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ২৩ থেকে ২৭ জুলাই রাজধানীর মোট ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সংঘর্ষ ও সংঘাতের ঘটনায় তখন আহত ৬ হাজার ৭০৩ জনের কথা জানা গিয়েছিল। এসব রোগী ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে এসেছেন। যদিও মোট কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন।