• রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন

ঢুকছে পানি সঙ্গে বৃষ্টি, ১০ জেলায় বন্যার অবনতি

আবিদুর রহমান সুমন / ৮০ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীর পানি হঠাৎ যেন ফুঁসে উঠেছে। এসব নদীর পানিতে ১০ জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, নোয়াখালীর আট উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও কসবা, রাঙামাটির সাজেক, কুমিল্লা, ফেনী, মৌলভীবাজারের দুটি উপজেলা, চট্টগ্রামের মিরসরাই, চাঁদপুর, সিলেট ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় সাজেকে দুই শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। ফেনীতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চেয়েছে জেলা প্রশাসন। সিলেটে পানি বাড়ছে। অন্যদিকে, খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা একই রকম থাকবে বলেও আভাস দিয়েছে তারা। বিস্তারিত কালবেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে।

খাগড়াছড়ি: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দি। দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি এবং লংগদু উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ২১ দিনের মাথায় এ নিয়ে জেলায় তৃতীয়বারের মতো বন্যা দেখা দিল।

বুধবার নতুন করে পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালার কবাখালী ও মেরুং ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়।

কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞান বিকাশ চাকমা বলেন, টানা ভারি বৃষ্টিতে কবাখালী ও মেরুং ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

বর্তমানে উপজেলায় ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে।

অন্যদিকে, চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহরের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বন্যায় তলিয়ে গেছে পুকুরের মাছ এবং ফসলি জমি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, বন্যাকবলিত লোকজনের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নোয়াখালী: টানা বর্ষণে নোয়াখালীর সার্বিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়ে আছে। উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টিতে এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে মুহুরী নদীর পানি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার পর ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আখাউড়া বীরচন্দ্রপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মারা গেছেন। ঘরে উজানের ঢলের পানি ঢুকে পড়ায় তাড়াহুড়া করে সরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে পানিতে ডুবে যান তিনি। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের ইনচার্জ খায়রুল আলম বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ২০-৩০ জন যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন। সকাল ১০টার পর থেকে ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, আজ সকালে তীব্র বেগে ভারত থেকে পানি আসতে শুরু করে। অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।

অন্যদিকে, কসবায় উজান থেকে পাহাড়ি ঢল ভারি বর্ষণের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় তিতাস, সালদা, সিনাই, বুড়ি, বিজনা, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১০ ইউনিয়নের কম পক্ষে ২০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে আরও প্রায় ৩০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষেতও তলিয়ে গেছে।

গত ১৯ আগস্ট সোমবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কসবার তিতাস, সিনাই, বুড়ি, বিজনা, সালদা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। সেই পানি কসবা ৬০০ হেক্টর রোপা আমনও বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।

বিনাউটি ইউনিয়ন উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের সাগরতলা গ্রামের খোরশেদ আলম বলেন, আমার চার বিঘা জমির ধানগাছ পানির নিচে আছে।

রাঙামাটি: টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে আটকে পড়েছেন দুই শতাধিক পর্যটক। পাহাড়ি ঢলে সাজেক-বাঘাইহাট সড়কের দুই স্থান ডুবে গেছে বলে জানা গেছে। এতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যারা বেড়াতে এসেছিলেন, তারা সবাই আটকা পড়েন। নতুন করে কোনো পর্যটক সাজেকে যেতে পারেননি।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে সব পর্যটকের কক্ষ ভাড়া ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। শুধু পানির বিল নেওয়া হচ্ছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার বলেন, সাজেকে আটকে পড়া পর্যটকদের খবর নেওয়া হচ্ছে।

কুমিল্লা: টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ।

সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গত ১০ বছর গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানান, বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গোমতী ছাড়াও কাকড়ী, পাগুলি ও সালদা নদী দিয়ে ভারত থেকে হুহু করে পানি আসা অব্যাহত রয়েছে।

ফেনী: জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাত থেকে নতুন করে ছাগলনাইয়া উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরশুরামে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা যায়। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব বলেন, পরশুরাম উপজেলায় বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। পৌরসভা এবং তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে।

অন্যদিকে, ফুলগাজী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে বলে জানান ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া। ছাগলনাইয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ছাগলনাইয়া পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার: টানা ভারি বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অসংখ্য বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে কমপক্ষে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উজানের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ইসলামপুর, আদমপুর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ, শমসেরনগর, রহিমপুর, পতনঊষা, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ-আদমপুর আঞ্চলিক সড়কের ঘোড়ামারা ও ভানুবিল মাঝেরগাঁও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, রানীরবাজার, ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল ও কুরমা চেকপোস্ট এলাকায় নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আদমপুর-ইসলামপুর সড়কের হেরেঙ্গা বাজার, শ্রীপুর ও ভান্ডারিগাঁও এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

কুলাউড়ায় বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার টিলাগাঁও, জয়চণ্ডী, সদর, রাউৎগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মনু নদ (রেলওয়ে ব্রিজ) বিপৎসীমার ১০৫ সে.মি, চাঁদনীঘাট এলাকায় ৭০ সে.মি, ধলাই নদীতে ৮ সে.মি ও জুড়ী নদীতে বিপৎসীমার ১৭৪ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপৎসীমা স্পর্শ করেছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আটটি স্থান দিয়ে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মনু নদেরও বাঁধ ভেঙে গেছে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা। বৃষ্টিতে ডুবে আছে সবজি ও রোপা আমন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ছোট-বড় খানাখন্দে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট-জোরারগঞ্জ সড়কে।

উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্যচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, এর আগেও বৃষ্টিতে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার এখন এই বৃষ্টিতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতের রোপা আমন ও সবজি ডুবে গেছে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, মিরসরাইয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।

সিলেট ব্যুরো: সিলেটে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ভারি বৃষ্টির ফলে বাড়ছে নদনদীর পানি। বিশেষ করে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ। তৃতীয়বারের মতো বন্যা দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের নদনদীর পানিও বেড়েছে। বুধবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদী এবং জকিগঞ্জের অমলশীদ, বিয়ানীবাজারের শেওলা, শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মুঈদ বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থার কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরও ২-৩ দিন সিলেটে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। শহরের কামড়াপুর, গরুর বাজার, জালালাবাদসহ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল শামীম হাসনাইন জানান, খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান কালবেলাকে বলেন, মৌসুমি লঘুচাপের কারণে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বুধবার বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, দেশের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি এই মুহূর্তে বাড়ছে। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী, হালদা নদীর পানি সাতটি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category