• শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

‘ঘরটাও গেল, খামারও গেল, নিঃস্ব হয়ে গেলাম’

আবিদুর রহমান সুমন / ১১০ Time View
Update : শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪

ফেনী সদরের খাইয়ারা এলাকার রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর কয়েক শ মুরগির বাচ্চা নিয়ে বসে ছিলেন খামারি মোহাম্মদ আলম। সড়ক থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে তাঁর খামারটির অবস্থান। তবে সেটি এখন পানির নিচে।

খামারে ২ হাজার ৮০০ মুরগি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। বন্যার পানিতে পাঁচ শতাধিক মুরগি ও বাচ্চা ভেসে গেছে। বাকি মুরগি ও মুরগির বাচ্চাগুলোকে আলম ও তাঁর ছেলে ধরাধরি করে মহাসড়কের বিভাজকের ওপর এনে রেখেছেন। সেখানেই গতকাল শুক্রবার বিকেলে আলমের সঙ্গে কথা হলো।

আরও পড়ুন

চারদিকে পানি, পরিবারের ৭ জন আটকা, খোঁজ পাচ্ছেন না ফারজান

বন্যার পানিতে আলম শুধু তাঁর খামারটিই হারাননি, ডুবেছে বসতঘর। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় এক প্রতিবেশীর বাসায়। আকস্মিক বন্যায় আলম বিপর্যস্ত। তাঁর চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। সরুকণ্ঠে আলম বলেন, ‘আমার ঘরটাও গেল, খামারও গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

আলমের ভাষ্য, খামারটি অনেক উঁচুতে ছিল। ওখানে পানি উঠে যাবে, কখনো ভাবেননি। গত বুধবার ভোরে পানি ওঠে। তখন তিনি খামারে ছিলেন না। বসতবাড়ি নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে ছিলেন। পরে গত বৃহস্পতিবার সকালে খামারে পৌঁছে দেখেন, নিচের তাকে রাখা মুরগির বাচ্চা মারা পড়েছে।

আলমের দুই ছেলে। পরিবার চলে তাঁর একার আয়ে। সদরের ফাজিলপুরে তাঁদের বাড়ি। আর্থিক লোকসানের হিসাব টেনে চল্লিশোর্ধ্ব এই খামারি বলেন, মুরগির বাচ্চা প্রতি পিস ৫০ টাকা করে কেনা। ৬ মাস পর পূর্ণবয়স্ক হলে প্রতিটি ২০০ টাকা করে বিক্রি করা যেত।

এখন এই লোকসান কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলম

এখন এই লোকসান কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলম। বলেন, ‘ঘরের সব জিনিস শেষ। খামারও শেষ। অন্যদিকে ঘাড়ে ঋণের বোঝা। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না।’

গতকাল বিকেলে সদরের লেমুয়া এলাকায় কথা হয় আরেক খামারির সঙ্গে। তাঁর নাম সৈয়দ আলী। তাঁর ছোট খামারের হাজারখানেক মুরগি ভেসে গেছে। সৈয়দ আলী প্রথম আলোকে বলেন, টিন আর বেড়া দিয়ে খামারটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর চোখের সামনেই খামারের ভেতরে কাঠের তাকগুলো ভেঙে পড়েছে।

খামারিদের তথ্য অনুসারে, ফেনী সদরে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০টি খামার রয়েছে। সব কটিই বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোকসানে জর্জরিত হয়েছেন খামারিরা।

আরও পড়ুন

ফেনীতে বন্যার পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু, ৬ জেলার ৪৩ উপজেলা প্লাবিত

ফেনীতে বন্যার পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু, ৬ জেলার ৪৩ উপজেলা প্লাবিত

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। সদর ও সোনাগাজী উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছেন। এ ছাড়া অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দী। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। মূলত ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে সরকারি হিসাবে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category