রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠনের অভিপ্রায়ে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়েছে। নবগঠিত এই প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবে আছেন সামান্তা শারমিন।
এই গণঅভ্যুত্থানে আমরা দুটি অংশ দেখতে পেয়েছি। যার মধ্যকার একটি হলো ছাত্র ও অন্যটি জনতা। ছাত্রদের নেতৃত্বে এবং পরবর্তী সময়ে জনগণের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। ছাত্ররা এখনো বিভিন্ন ইস্যুতে এক হয়ে কাজ করছেন। কিন্তু এই পর্যায়ে জনতার উপস্থিতি একটু হ্রাস পেয়েছে, তারা নিজেদের কাজে ফিরে গেছে। বিশেষ করে যুবকদের বড় একটি অংশ। এজন্য আমরা চিন্তা করছি, জনতার মধ্যকার যুবকদের অংশকে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে দেশকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করার। আমাদের কমিটির কাজ হবে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা; বিভিন্ন সামাজিক, আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।
সামান্তা শারমিন নাগরিক কমিটিতে যারা আছেন, তাদের কারোরই কোনো দলীয় সম্পৃক্ততা নেই। কারও কারও অতীতে থাকলেও থাকতে পারে, এই মুহূর্তে নেই। বাংলাদেশকে পরিবর্তন করার জন্য গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, ভাবাদর্শ, মতাদর্শ নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার প্রচেষ্টা করব—এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে হটানো সম্ভব হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা রয়েই গেছে এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তও হয়নি। সেই কারণে কমিটিতে যারা বর্তমানে আছেন এবং ভবিষ্যতে যারা যুক্ত হবেন, তারা কেউ দলীয় ব্যানারে বা দলীয় পদ থাকা অবস্থায় আসতে পারবেন না। তাদের নানারকম সামাজিক উদ্যোগ থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে যার অবদান দেশ পুনর্গঠনে কাজ করবে, সেই অনুযায়ী আমরা তাকে যুক্ত করার চেষ্টা করব। গণতান্ত্রিক উপায়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে যদি নিজের মতাদর্শকেও সেক্রিফাইস করতে হয়, তাহলে আমরা সেটাই করব দেশের কথা ভেবে। এই চিন্তাভাবনার জায়গা থেকেই কমিটি গঠিত হয়েছে এবং জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটিতেও এটা মাথায় রাখা হবে।