অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে ঐক্যমত হয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দিয়েছেন সুখবর।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুখবর দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমার। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সর্বাত্মক সহযোগী থাকব।’
টিকিট জটিলতায় যেসব বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি তাদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশ সফররত আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘মালোয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রথম পর্যায়ে ১৮ হাজার বাংলাদেশি নেওয়া হবে। এছাড়া যেসব বাংলাদেশি মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদেরকেও সুবিধা হবে।’
আমাদের দেশে আরও জনশক্তি প্রয়োজন, তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে উল্লেখ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের সাথে সেমি কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনলোজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
আমাদের দেশে যেসব কর্মী আছেন তারা আধুনিক দাস নয় মন্তব্য করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, এই বিষয়ে আমরা পরিস্কার ধারণা রাখি। তবে বিদেশি অনেক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ রয়েছে। তাদের বিষয়টা ভিন্ন। এই দুটো বিষয়কে এক না করার আহ্বান জানান তিনি।
আমার পুরোনো বন্ধু এবং বাংলাদেশের পুরোনো বন্ধু আসায় আমি খুবই খুশি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রথম কোনো দেশের সরকারপ্রধানের বাংলাদেশ সফর।
আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, যেখানে তারুণ্যের শক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।
চতুর্থ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস আরও বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয় এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি এবং ভিসা সহজীকরণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া আসিয়ান জোটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
এর আগে, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে।
তারও আগে, বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম খুব দ্রুত বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাতে ফোন করে এ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
এদিকে ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।