• সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২১ অপরাহ্ন

রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের রিয়েল হিরো : আইসিবির চেয়ারম্যান

আবিদুর রহমান সুমন / ৯৩ Time View
Update : শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে দেশের চারদিকে যে চাকচিক্য তা অভিবাসীদের রেমিট্যান্সের কারণে হয়েছে। তাদের প্রেরিত অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই দেশের রিয়েল হিরো। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের প্রখর দেশাত্মবোধ রয়েছে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে ‘অভিবাসী কর্মীদের যথার্থ মূল্যায়নই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। আরও বক্তব্য দেন হেলভেটাস বাংলাদেশের সিম্স প্রকল্প পরিচালক আবুল বাসার। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা করছে সিম্স প্রকল্প, হেলভেটাস বাংলাদেশ।

আবু আহমেদ বলেন, তারা বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ও রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল। নানা শর্তের বেড়াজালে আইএমএফ চার বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। অথচ প্রবাসীরা কোনো শর্ত ছাড়াই বছরে ২৪/২৫ বিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করছে।

তিনি অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে তাদের মূল্যায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর বর্তমানে প্রদত্ত প্রণোদনার হার বাড়ানোর সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে অভিবাসীদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তির বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না করা গেলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বেড়ে যেত। এ দেশের উন্নয়নের মূল নায়ক কৃষক, শ্রমিক, মজুর, সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সারা পৃথিবীতে অবস্থানকারী অভিবাসী ভাই-বোনেরা। অভিবাসী কর্মীরা আমাদের সোনার সন্তান। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের শ্রমে-ঘামে উপার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করে। তাদের উপার্জিত আয়ের কারণেই আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে, আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। আমরা দেখেছি পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে জুলাই বিপ্লবের সময় সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে ১.৯১ বিলিয়ন ডলার অথচ আওয়ামী সরকার পতনের পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এই দুই মাসে প্রবাসী আয় ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। মূলত জুলাই মাসে হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেয়। পতিত আওয়ামী সরকার যদি আরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকত, আমার ধারণা প্রবাসী ভাই-বোনেরা তাদের রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধই করে দিত।

কিরণ আরও বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সঙ্গে যেসব মালিক জড়িত ছিল, সে সব ব্যাংকের ফরেন রেমিট্যান্স হাউস কর্মীদের কাছ থেকে সংগৃহীত রেমিট্যান্স দেশেই পাঠাত না। ঐ বিদেশি অর্থ ব্যাংক মালিকরা তাদের রেমিট্যান্স হাউস থেকে নিজেরাই সে দেশে রেখে দিত। বাংলাদেশে তা প্রেরণ করত না। সেই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তিত হওয়ায় এখন আর প্রবাসী কর্মীদের থেকে সংগ্রহকৃত অর্থ তারা সে দেশে রেখে দিতে পারছে না। এটিও রেমিট্যান্স বাড়ার আর একটি কারণ। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রী, আমলা, ব্যবসায়ীরা লুণ্টনকৃত অর্থ বিদেশে পাচার করত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উপর দায় চাপালেই চলবে না।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আমাদের অনেক কর্মী ভালো বেতনে স্বল্প খরচে বিদেশে গিয়েও কর্মস্থল থেকে পালিয়ে অবৈধভাবে অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ভূমধ্যসাগর দিয়ে জাহাজে করে ইউরোপ, ইটালিসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। কর্মীদের এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দায় পড়ছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উপর। যারা টুরিস্ট, স্টুডেন্ট, ট্রানজিট ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে বডি কন্টাক্টের মাধ্যমে মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়ছে, তা ঠেকাতে না পারলে দেশের বদনাম বাড়তে থাকবে। এমনকি অবৈধভাবে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকলে লেবার রিসিভিং কান্ট্রিগুলো আমাদের কাছ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে বিদেশে কর্মী প্রেরণ করছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে পোশাক শিল্প মালিকদের মতো আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘অভিবাসী কর্মীদের যথার্থ মূল্যায়নই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে পরাজিত করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এসএম মোর্শেদ, ড. জামিল আহমেদ, সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী ও সাংবাদিক আরাফাত আরা। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, সনদপত্র ও চ্যাম্পিয়ন দলকে ৩০ হাজার ও রানারআপ দলকে ২০ হাজার টাকা নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category