জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে পরিচালিত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার। এর মধ্যে গুমের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ২২ জন এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন, যাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ভারতে পালিয়ে যান, যেখানে তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন।
এছাড়া, সরকার ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সহিংসতায় শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছে। প্রথম ধাপের তালিকায় শহীদ ৮২৬ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৫ বছরে দেশে বহু মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনায় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। এই কমিশন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যাতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর নৃশংস নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ৪৮ ঘণ্টা থেকে শুরু করে, কিছু ক্ষেত্রে কয়েক মাস কিংবা ৮ বছর পর্যন্ত গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হতো। এমনকি, কিছু গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যার পর তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হতো, অথবা রেললাইনে ফেলে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হতো।
এই কমিশন মোট ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ পেয়েছে, এর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে, ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন, তবে ২৭ শতাংশ (প্রায় ২০৪ জন) এখনও নিখোঁজ।