একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “রাতের ভোট” নিয়ে বিতর্ক আজও আলোচনায়। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নাম এসেছে অনেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপারদের (এসপি)। তবে এদের মধ্য থেকে ব্যতিক্রমী ভূমিকার জন্য আলাদা করে আলোচিত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এ জেড এম নুরুল হক।
সরকারদলীয় প্রার্থীদের চাপ এবং উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ অমান্য করে ভোটের আগে রাতেই ব্যালটে সিল মারার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। তার এই অবস্থানের ফলস্বরূপ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের মধ্যে দুটিতে বিপুল ভোটে জয়ী হন বিএনপি প্রার্থীরা।
জানা যায়, ভোটের আগের রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে সরকারদলীয় প্রার্থীরা মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে জেলা প্রশাসককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন মহলের ফোন আসলেও তা উপেক্ষা করেন নুরুল হক।
ভোটের দিন সকাল পর্যন্ত তার এই দৃঢ় অবস্থান বজায় থাকে। এর ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সামিল উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হলেও তা ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।
নির্বাচনের পর নুরুল হককে পদ থেকে সরিয়ে বিভিন্ন কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বদলি করা হয়। চার বছরে তাকে ছয়বার বদলি করা হয়। একটি জলমহাল লিজ দেওয়ার বিষয়ে সরকারি উচ্চপদস্থদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় তাকে চাকরিচ্যুতির হুমকিও দেওয়া হয়।
তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার অনুরোধ সত্ত্বেও নুরুল হক সরকারি নীতি লঙ্ঘনে রাজি হননি। এর ফলে তিনি ক্ষমতাসীনদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোট কারচুপিতে জড়িত ডিসি-এসপি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ডিসি-এসপি বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই অনিয়মে জড়িত ছিলেন।
বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুল হক বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেছি। বন্দুকের নলের সামনে মাথা নত করিনি। তবে এজন্য আমাকে অনেক হয়রানি সহ্য করতে হয়েছে।”
এক বিরল দৃষ্টান্ত
যেখানে সারাদেশে সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করেছেন, সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি নুরুল হক একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেন। তার সাহসিকতা ও নিরপেক্ষ ভূমিকা এখনো অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।