অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রণয়ন করা না গেলে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে ঘোষণাপত্রের কোনো প্রয়োজন নেই।”
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সর্বদলীয় বৈঠকের সূচনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ছাত্ররা এক সময় একটি ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল এবং তাকে এতে অংশ নিতে বলেছিল। তবে তিনি বিষয়টি যাচাই করার পর তা সমর্থন করেননি। তিনি বলেন, “আমি জানতে চেয়েছিলাম, তারা কী ঘোষণা দেবে। শোনার পর বললাম, এটি হবে না। আমি এতে অংশ নেব না, এবং তোমাদেরও এটি করা উচিত হবে না। যদি তোমরা ৫ আগস্টের সময়ের ঐক্যের পরিবেশে ফিরে যেতে চাও, তবে সেদিন যা হয়েছিল সেটাই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেদিন সবাই একতাবদ্ধ ছিল, কেউ ভিন্ন পরিচয় নিয়ে কথা বলেনি।”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের যে ঐক্য তোমরা সৃষ্টি করেছিলে, তার অবমাননা করা উচিত হবে না। প্রথমে তারা আমার কথায় খুশি হয়নি। তবে পরে তারা বুঝতে পেরেছে, ৫ আগস্টের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে একত্রে কাজ করতেই হবে। সেই কথার ভিত্তিতেই আজকের এই আলোচনা। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে না পারি, তাহলে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কোনো দরকার নেই। বরং দরকার সেই সময়ের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখা, যা আমাদের সাহস জোগায় এবং একতাকে উদ্দীপিত করে।”
ড. ইউনূস বলেন, “ঐক্যের মাধ্যমে দেশের জনগণকে দেখাতে হবে যে আমরা জেগে আছি। আমাদের অনুভূতি ভোঁতা হয়নি, বরং চাঙ্গা আছে। জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ।”
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দোয়া করবেন, আমি যতদিন আছি, ঐক্য ধরে রাখব। এই পথেই আমাদের চলতে হবে। আজকের বৈঠকে আপনাদের দেখে খুব সাহস পাচ্ছি। ৫ আগস্টের ঐক্যকে কীভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে যদি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি, তবে তা দেশের জন্য যেমন ইতিবাচক হবে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হবে।”
সভার আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদেরসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।