বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে নাম জড়ানোর পর ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার সেই অনুরোধে সাড়া দিতে যাচ্ছে দেশটির জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনএসি), এমনটাই জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ।
বুধবার (৫ মার্চ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্কাই নিউজ জানায়, শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে যুক্তরাজ্য। তদন্তকারীরা এখন ভাবছেন, কীভাবে বাংলাদেশকে এই বিষয়ে সহায়তা করা যায়।
এর আগে স্কাই নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং তার বিচার হওয়া উচিত।” এই মন্তব্যের পরই জানা যায়, ব্রিটিশ তদন্ত সংস্থাগুলো বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ যুক্তরাজ্যে গেছে কি না, তা খতিয়ে দেখার বিষয়ে আগ্রহী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সহযোগী কেন্দ্র (আইএসিসিসি), যা যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনএসি) দ্বারা পরিচালিত, এই তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। সংস্থাটির অর্থায়ন করে যুক্তরাজ্য সরকার।
গত অক্টোবর ও নভেম্বরে এনএসি কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন। শেখ হাসিনা, টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তারা দেশে আসেন। এরপর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, সাবেক সিটি মিনিস্টারের সম্পদ সম্পর্কেও তারা অনুসন্ধান করবেন।
তবে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, এই অনুসন্ধান মানে এই নয় যে ব্রিটিশ সংস্থাগুলো টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত করছে। বরং তারা দেখছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে আত্মসাৎ করা অর্থ ব্রিটেনে পাচার করা হয়েছে কি না।
এদিকে, টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি কোনো অবৈধ সম্পদ অর্জন করেননি। লন্ডনে উপহারের ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করা একটি ভুল ছিল এবং এখন পর্যন্ত এ নিয়ে তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপরই টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। জানা যায়, হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির কাছ থেকে লন্ডনে মাল্টিমিলিয়ন ডলারের একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছিলেন তিনি, যা তিনি গোপন করেছিলেন। বিষয়টি ফাঁস হলে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশে অবকাঠামোগত প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তেও টিউলিপের নাম উঠে এসেছে। এসব দুর্নীতির অভিযোগের কারণে রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। অনেকেই মনে করছেন, যুক্তরাজ্যে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হয়তো এখানেই শেষ হতে যাচ্ছে।