মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন, চলছে সর্বোচ্চ চিকিৎসা
মাগুরায় বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটি বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক বিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তার জ্ঞান এখনও ফেরেনি, শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন এবং অস্থিতিশীল। তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিশুটির চিকিৎসার জন্য সিএমএইচের প্রধান সার্জনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডে শল্য বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু সার্জন, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ এবং থোরাসিক সার্জন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে শিশুটি তার বোনের শ্বশুর হিটু শেখের (৫০) দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। ঘটনার পর বেলা ১১টার দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। পরে তার মা হাসপাতালে ছুটে আসেন।
অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং ৭ মার্চ রাতে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
সিএমএইচের এক চিকিৎসক জানান, শিশুটির যৌনাঙ্গে গুরুতর ক্ষত, গলায় বড় ধরনের আঘাত এবং বুকের ওপর প্রচণ্ড চাপের চিহ্ন রয়েছে। গলায় ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল এবং বুকের ওপর চাপের কারণে ফুসফুসের অস্বাভাবিক অংশে বাতাস প্রবেশ করেছে।
রোববার (৯ মার্চ) সকালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত বাতাস বের করতে টিউব বসানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে খিঁচুনি দেখা দেয়। বর্তমানে শিশুটি অচেতন অবস্থায় রয়েছে, তবে খিঁচুনি আপাতত নেই। রক্তে সংক্রমণের মাত্রা খুব বেশি এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির দুলাভাই ও তার বাবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (৯ মার্চ) রাত ১২টার দিকে মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মতিনের আদালতে শুনানি হয়। পুলিশ অভিযুক্তদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখকে সাতদিন এবং সজীব হোসেন, রাতুল শেখ ও জাবেদা বেগমকে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ধর্ষণের শিকার শিশুটির ছবি, ভিডিও এবং পরিচয় শনাক্তকারী সমস্ত তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং বিটিআরসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে, যারা ভিকটিমের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ধর্ষণের মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। নতুন সংশোধিত আইনে ধর্ষণের মামলায় জামিনের সুযোগ থাকবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান নেই। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় থাকবে এবং অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারীরা যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।