• বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:০০ অপরাহ্ন

নির্বাচন নিয়ে সারজিসের মন্তব্য, রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া

আবিদুর রহমান সুমন / ৬৯ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫

ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক, রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের মন্তব্য— ‘শেখ হাসিনার বিচারের আগে কেউ যেন নির্বাচনের কথা না বলে’—নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া

সারজিস আলমের মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে স্পষ্ট, নির্বাচন এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া নিয়ে তারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘বিচার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা নির্দিষ্ট সময়সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। পাঁচ, ছয় বা ২০ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু নির্বাচন সময়মতো হতে হবে। নির্বাচনকে অনিশ্চয়তায় ফেলা উচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকলে তা দেশের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক নয়। জনগণই এই রাষ্ট্রের মালিক, তাদের অধিকার যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে দিতে হবে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়, কারণ জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনো পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো অবশ্যই নির্বাচনের আগেই করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর সাহাবুদ্দিন সরকার মাত্র তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করেছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও দেড় বছর যথেষ্ট সময়।’

বিচার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে ভিন্নমত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বিচারিক প্রক্রিয়ায় চলবে এবং তা সময়মতো নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট পেলে সংসদে আলোচনা-বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু কেউ যদি এককভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়, তাহলে তা একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতাকে প্রতিফলিত করবে।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি এবং দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছি। ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিচার ও নির্বাচন—দুটোই একসঙ্গে করা সম্ভব।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ছাত্ররা অনেক কিছু বলছে, তবে সরকারের সিদ্ধান্ত এতে পরিবর্তিত হয়নি। নির্বাচন বন্ধ রাখা কোনো যুক্তিসঙ্গত দাবি নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচার দীর্ঘমেয়াদি আইনি প্রক্রিয়া, যা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে বিচার শুরু করা যেতে পারে।’

এনসিপির অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘নির্বাচন ও বিচার—এই দুই প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে মেলানো ঠিক নয়। বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচার কার্যকর ও দৃশ্যমান হলে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবার মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে। তবে বিচারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়।’

উপসংহার

ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা আসলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও সবাই একমত যে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি। তবে বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গে করা কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মতামত স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

4o


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category