• শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

খোঁজ নেই ঢাকা ওয়াসার এমডির

আবিদুর রহমান সুমন / ১৩৬ Time View
Update : সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের অন্যতম আলোচিত চরিত্র ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই খোঁজ নেই তাকসিমের। এরপর এক দিনও নিজের দপ্তরে আসেননি। তিনি দেশে আছেন, নাকি বিদেশে চলে গেছেন, সেটিও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

তাকসিম এ খান, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তাকসিমকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তাঁর মেয়াদ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ে ১৬ বার।

গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসা আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তাঁর অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তাঁর সময়ে নিয়োগ পাওয়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। তবে আজ সোমবার পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার এমডির বিষয়ে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আর ঢাকা ওয়াসা কার্যালয়ে আসেননি তাকসিম এ খান। তিনি গুলশানে ওয়াসার চেয়ারম্যানের বাসভবনেও নেই। এখন কোথায় আছেন, তা–ও জানা যায়নি। তবে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

আজ দুপুরে ঢাকা ওয়াসায় তাকসিম এ খানের কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, তিনি আসেননি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এমডির স্টাফ অফিসার ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এস এম মোস্তফা তারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ১ আগস্ট এমডির সঙ্গে শেষ দেখা হয়। এরপর তাঁর সঙ্গে আর কথাও হয়নি। তিনি কোথায় আছেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’

গতকাল রোববার কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, তাকসিমের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই তাঁদের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হতো। কয়েকজন চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে আদালতের আদেশ নিয়ে আসার পরও চাকরি করতে দেওয়া হয়নি।

তাকসিম এ খানের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার মতো কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে।

ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন বর্তমানে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা।

ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান ও মামলার সুপারিশ রয়েছে। তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। তিনি যেকোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category