• সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের স্থান দিতে হবে: ড. ইউনূস

আবিদুর রহমান সুমন / ১০৬ Time View
Update : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থী। তাদের অবশ্যই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে।

আজ শনিবার ভারতে আয়োজিত তৃতীয় ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘লিডার্স সেশন’-এ ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে ড. ইউনূস এ কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটাই ছিল ড. ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় বৈঠক। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঞ্চালনায় রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ের এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী নেতাদের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘অ্যান এমপাওয়ার্ড গ্লোবাল সাউথ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার।’

অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। তারা আলাদা। তারা একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ড. ইউনূস মনে করেন, তরুণ ও শিক্ষার্থীরা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে তারা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তরুণেরা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। তারা যে কাজ চায়, তা উপভোগ করার কারণে নয়; বরং অন্য কিছু পাওয়া যায় না, তাই চায়। কারণ সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘সব মানুষই সৃজনশীল জীব হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তারা স্বভাবজাত উদ্যোক্তা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শুধু চাকরিপ্রার্থী তৈরি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। তিনি আশা করেন, তারা গ্লোবাল সাউথে একসঙ্গে এটি করতে পারে। এটি দারুণভাবে সৃজনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীসমৃদ্ধ।

সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে উদ্যোক্তা সমন্বয় অলৌকিক কিছু ঘটাতে পারে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীর সৃজনশীলতা ও শক্তির বিকাশে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে তিনি গ্লোবাল সাউথে কিছু সাধারণ সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব করতে চান।

ড. ইউনূস সকল পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে এটি একটি বিশাল শক্তি হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘বুড়ো হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনাকে অবসর নিতে হবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে।’

নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে রূপান্তর নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন তাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করা।

গ্লোবাল সাউথের নেতাদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন ‘অন্যথায় আপনারা গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করতে পারেন। ঢাকার বেশির ভাগ অংশ বিশ্বের গ্রাফিতির রাজধানীতে পরিণত হয়েছে।’ তিনি বলেন, তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরোনো এই শহরের দেয়ালে ‘নতুন গণতান্ত্রিক’ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে।

ড. ইউনূস ইতিহাস উদ্ধৃত করে বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশি ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল। এটি সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রায় সাত দশক পরে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় বিপ্লব গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদা, সমতা এবং অংশীদারত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপন করতে গ্লোবাল সাউথ জুড়ে যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে। তিনি বলেন, ‘আমি সবচেয়ে বয়স্ক ‘তরুণ’ হিসেবে এই বিপ্লবে অংশ নিতে পেরে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। তাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।’

ভারত ২০২৩ সালের ১২ ও ১৩ জানুয়ারি প্রথম ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস) এবং একই বছরের ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করেছিল। দুটি সামিটই ভার্চ্যুয়াল ফরম্যাটে আয়োজন করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category