• সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন

সাবেক এমপিদের ৫২ বিলাসী গাড়ি বন্দরে আটকা

আবিদুর রহমান সুমন / ৯৬ Time View
Update : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

নির্বাচিত হওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় একটি গাড়ি আমদানির সুযোগ পান সংসদ সদস্যরা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই সুবিধা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা সংসদে পাস হয়নি। ফলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনতে তৎপর ছিলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপিরা। এর মধ্যে কিছু গাড়ি বন্দরে এসে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি পৌঁছানোর কথা। এই তালিকায় থাকা গাড়ির সংখ্যা ৫২। তবে শেষ পর্যন্ত শুল্ক না দিলে এসব গাড়ি বন্দর থেকে ছাড়াতে পারবেন না আমদানিকারকরা। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। এ কারণে বাতিল হয়ে গেছে ওই সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধার কাগজপত্র দিয়ে এসব গাড়ি আনা হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আর সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না। এখন স্বাভাবিক শুল্ক-কর দিয়ে গাড়িগুলো খালাস করতে হবে।

সূত্র জানায়, শুল্ক সুবিধার আওতায় বেশিরভাগ গাড়ি জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট মডেলের এসব গাড়ির ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সিসি। সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে; তবে এমপিদের তা দিতে হয় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা গাড়িগুলো আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও নেত্রকোনার সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এস এ কে একরামুজ্জামান, ফয়জুর রহমান, সিরাজগঞ্জের চয়ন ইসলাম ও জান্নাত আরা হেনরি, নাটোরের আবুল কালাম ও সিদ্দিকুর রহমান পাটওয়ারী, বগুড়ার মজিবুর রহমান মঞ্জু ও রেজাউল করিম তানসেন, টাঙ্গাইলের অনুপম শাহজাহান জয়, ঢাকার চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সুনামগঞ্জের রনজিৎ সরকার ও ড. সাদিক, গাইবান্ধার আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যশোরের নওয়াব আলী জোয়ার্দার, ঝিনাইদহের মো. নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, লক্ষ্মীপুরের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দিনাজপুরের মুহাম্মদ জাকারিয়া। এ ছাড়া সাবেক এমপিদের মধ্যে গাড়ি আমদানি করেছেন আব্দুল মোতালেব, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, শাহ সরওয়ার কবির, এবিএম আনিসুজ্জামান, সাদ্দাম হোসাইন পাভেল, এস এম আল মামুন, আক্তারুজ্জামান, মো. সাইফুল ইসলাম, এস এম কামাল হোসেন, মাহমুদ হাসান রিপন, মুজিবুর রহমান, এস এম আতাউল হক, মাহমুদুল হক সায়েম, মো. মতিউর রহমান, মো. তৌহিদুজ্জামান, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ ও সিদ্দিকুল আলম। এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনে সদস্যদের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন তারানা হালিম, সানজিদা খানম, নাসিমা জামান ববি, খালেদা বাহার বিউটি, রুনু রেজা ও সাহিদা তারেক দিপ্তি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘সংসদীয় আসনে এমপিদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। বর্তমানে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় তা শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাসের সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী, স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই খালাসের অপেক্ষায় থাকা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে হবে। সম্প্রতি যেসব গাড়ি খালাস হয়েছে, তা ৬ আগস্টের আগে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন ছিল। ফলে আইনানুগভাবে তা আটক করার সুযোগ ছিল না। তবে যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে, তা খালাসের সুযোগ নেই। এ ধরনের গাড়ি খালাস করতে হলে শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করতে হবে বলেও জানান তিনি।’

সূত্র আরও জানায়, এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি হয়েছে। আমদানিকারকের পক্ষে এসব গাড়ি খালাসের দায়িত্বে ছিলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নাভানা লিমিটেড, গোল্ডেন স্টার এজেন্সি এবং ছেরি এন্টারপ্রাইজসহ ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান। খালাসের অপেক্ষায় থাকা এসব গাড়ির আমদানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই এসব গাড়ি খালাস করতে হবে।

এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, এই ৫২টি গাড়ির (যার বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো) আমদানি মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছিল ৯৮ লাখ টাকার সামান্য কিছু কমে। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা ৩ হাজার ৩৪৬ সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

জানা গেছে, এমপিদের খুশি করতে ১৯৮৭ সালে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা চালু করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। প্রস্তাবে শুল্ক আরোপের পেছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছিল, এমপিদের গাড়ি আমদানিতে কর মওকুফের কারণে গত ১৫ বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category