• শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা মানুষ জানতে পারেনি

আবিদুর রহমান সুমন / ৭৭ Time View
Update : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদ। তিনি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে ১৫ বছরে শুধু বিগত সরকারের কথা শুনতে হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা অনেক কিছুই জানা নেই। জনগণও জানতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থানরত মইন ইউ আহমেদ গত বৃহস্পতিবার তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজের ভাষ্য তুলে ধরেন। ‘মইন আহমেদ’ নামের ইউটিউব চ্যানেল ও বক্তব্য নিজের বলে প্রথম আলোকে গতকাল মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন মইন ইউ আহমেদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালে তিনি কথাগুলো বলতে চেয়েও পারেননি। তবে তিনি মনে করেন, তখন সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নিয়েছিল এবং ঘটনা কী ছিল, সে সম্পর্কে মানুষের জানা উচিত। বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি এখন ঘটনাগুলো তুলে ধরতে পারছেন।

মইন ইউ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, তিনি অসুস্থ। চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যেই তিনি ঘটনা তুলে ধরেছেন।

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ঘটেছিল দেশের ইতিহাসের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড। বিডিআরের বিদ্রোহে ওই সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।

মইন ইউ আহমেদ ২৫ আগস্ট ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেন। সেখানে ২৯ মিনিটের ভিডিও বার্তায় তিনি সেদিনের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনী ও তৎকালীন সেনাপ্রধানের ভূমিকা অনেকের জানা নেই। অনেকে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন। ভূমিকা কী ছিল, তা তিনি জানাতে চান।

মইন ইউ আহমেদ বলেন, সেনাবাহিনীর অব্যবহৃত কিছু অস্ত্র বিডিআরকে দেওয়া নিয়ে বাহিনীটির তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের (হত্যাকাণ্ডে নিহত) সঙ্গে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাঁর কথা হয়। তিনি অস্ত্রগুলো নিতে রাজি হন। তখন পর্যন্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে তিনি (বিডিআরের ডিজি) কিছুই জানতেন না বলেই সাবেক সেনাপ্রধানের বিশ্বাস।

একটি বৈঠকে থাকার সময় ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিলখানায় কিছু একটা ঘটার তথ্য জানতে পারেন বলে উল্লেখ করেন মইন ইউ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ রুমে প্রবেশ করেন এবং আমাকে কানে কানে বলেন, পিলখানায় গন্ডগোল হচ্ছে। আপনার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।’

বিদ্রোহের সময় পিলখানার চিত্রফাইল ছবি

মইন ইউ আহমেদ জানান, তিনি তখন ওই সভা স্থগিত করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিডিআরের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁদের ফোন ধারাবাহিক ব্যস্ত ছিল। সামরিক গোয়েন্দারা তখন তাঁকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। ভয়াবহতা উপলব্ধি করে তিনি তখন সময় বাঁচাতে কারও নির্দেশ ছাড়াই সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করে, যার নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন রি-স্টোর অর্ডার’।

সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে বিডিআরের ডিজিকে ফোনে পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেন মইন ইউ আহমেদ। তিনি বলেন, বিডিআর ডিজি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি (মহাপরিচালক) বলেন, দরবার চলাকালীন দুজন সশস্ত্র সৈনিক দরবার হলে প্রবেশ করে। একজন ডিজির পেছনে এসে দাঁড়ায়, অপরজন দরবার হল অতিক্রম করে বাইরে চলে যায়। তার পরপরই বাইরে থেকে গুলির শব্দ আসে। গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে উপস্থিত সৈনিকেরা গন্ডগোল শুরু করে দেয়। তারা দাঁড়িয়ে যায়। দরবার হল থেকে বের হয়ে যায়।

মইন ইউ আহমেদ বলেন, ‘মনে হলো সব পরিকল্পনার অংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category