• শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন

আবু সাঈদের সঙ্গে গুলিতে আহত সিয়াম ভুগছেন উন্নত চিকিৎসার অভাবে

আবিদুর রহমান সুমন / ১০২ Time View
Update : শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদুল হক সিয়াম (২৩) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সাহসী কর্মী। তিন বছর ধরে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা ও জীবনের খরচ চালানো এই তরুণ, এখন আন্দোলনে আহত হয়ে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে জীবনযুদ্ধে লড়ছেন।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিয়াম সক্রিয় ছিলেন। শহীদ আবু সাঈদসহ অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে তিনি মানববন্ধন, মিছিল এবং প্রতিবাদে অংশ নেন। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের শাহাদতবরণের সময় সিয়াম তার পাশে ছিলেন। সাঈদকে রক্ষা করতে গিয়ে সিয়াম নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। তার শরীরে ৬০টি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়, যার মধ্যে ছয়টি এখনও মাথার ভেতরে রয়ে গেছে।

চরম আর্থিক সংকটের কারণে উন্নত চিকিৎসা নিতে না পারায় সিয়ামের শরীরে থাকা গুলির স্প্লিন্টারগুলো ক্রমাগত তার শারীরিক অবস্থাকে অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাথার ভেতরে থাকা ছররা গুলির কারণে তার সার্বক্ষণিক মাথাব্যথা এবং নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে তার পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে জন্ম সিয়ামের। তার বাবা দুবাইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন, আর মা একজন গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে সিয়াম বড়। পরিবারের সামান্য আয়ে তিনি এতদিন নিজের পড়াশোনা চালিয়ে এলেও আহত হওয়ার পর থেকে টিউশনির কাজ হারিয়ে ফেলেছেন। চিকিৎসা খরচ মেটাতে তাকে ঋণগ্রস্ত হতে হয়েছে।

সিয়ামের ভাষায়, “আমি আবু সাঈদকে গুলির হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের অতর্কিত হামলায় আমরা কেউ রক্ষা পাইনি। আবু সাঈদের মৃত্যু আমার চোখের সামনে ঘটেছে। এই স্মৃতি আমাকে প্রতিদিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে।”

সিয়ামের মতে, তার চিকিৎসার জন্য উন্নত ব্যবস্থা প্রয়োজন। স্থানীয় হাসপাতালগুলো তার অবস্থাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। অথচ প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। সিয়াম বলেন, “আমার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পেতে চাই। কিন্তু অর্থ সংকট এবং শারীরিক যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিচ্ছে।”

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম এক নায়ক সিয়ামের চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তার চিকিৎসা, পড়ালেখা এবং পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সমাজের সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। সিয়ামের মতো সাহসী তরুণদের সহযোগিতাই একটি সমতার সমাজ গঠনে আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category