সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তথ্যযুদ্ধ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতে বসে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। আমরা মাঠে আছি এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ছাত্র-জনতাও মাঠে থাকবে। রাজপথ তাদের দখলেই থাকবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আহম্মদ ফয়েজের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ডিজিএফআই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করেছিল। তবে এ নিয়ে তাঁর বা তাঁর কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত রাগ বা অভিযোগ নেই। তিনি শুধু চান, এসব সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকরা সত্য প্রকাশ করে জাতির কাছে ক্ষমা চান।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনের সময় কিছু সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৬ জুলাইয়ের পর আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সে সময় গণমাধ্যমগুলোর উচিত ছিল ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। তারপরও যারা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পক্ষে কাজ করেছে, তাদের মনে রাখা উচিত যে ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া তিনি বলেন, ভারতের কাছে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি চাইবে সরকার। ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার এবং রাজনৈতিক মিটিং করার দায় ভারত সরকারকেই নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ১৯৭১-এর পরে আমাদের ডকুমেন্টেশন আর্কাইভ খুব দুর্বল ছিল। ফলে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে, হিরোরা ভিলেন হয়েছে এবং ভিলেনরা হিরো হয়েছে। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এমনটি হবে না, কারণ অসংখ্য ডকুমেন্ট, ছবি ও ভিডিও রয়েছে যা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। আহম্মদ ফয়েজের এই বইটি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিবিআই) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ফ্যাসিবাদ একটি ছায়া, যার মূল কেন্দ্র দিল্লিতে থাকলেও এর ছায়া এখনো বিদ্যমান। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এটিকে আর ফিরে আসতে দেবে না।
বইটির লেখক, সাংবাদিক ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহম্মদ ফয়েজ বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন যে সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকার ডকুমেন্টেশন থাকা জরুরি। সেই ভাবনা থেকেই তিনি ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার সংকলন করেন এবং পরে সেগুলোর ভিত্তিতে ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইটি প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বইটি জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।